উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি মৌসুমে সবচেয়ে কম তাপমাত্রা। শীতকাল শুরু আগেই হিমালয়–কন্যাখ্যাত উত্তরের এই জনপদে বইতে শুরু করেছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তবে সকালে ঝলমলে রোদের দেখা মেলায় কিছুটা স্বস্তি এসেছে জনজীবনে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ৯৯ শতাংশ এবং বাতাসের গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন বেলা ৩টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ২৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ওই দিন সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা গোপালগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছিল।
আবহাওয়াবিদদের ভাষ্য, কোনো এলাকায় দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে ওই এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যায়। সে হিসেবে তেঁতুলিয়ায় বর্তমানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. সাবেত আলী জানান, পঞ্চগড়ের শীতার্ত মানুষের জন্য ইতিমধ্যে সরকারিভাবে দুই হাজার কম্বল ও শীতবস্ত্র কেনার জন্য ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এসব বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারিভাবে বিভিন্ন সংগঠন ইতিমধ্যে প্রায় ১০ হাজার কম্বল জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিতরণ করেছে।
আজ সকালে পঞ্চগড় সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চারদিক ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন। গাছের পাতা, ফসলের খেত এবং ঘাসের ওপর শিশিরবিন্দু ঝরছে। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কের যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। কনকনে শীতের মধ্যেও গায়ে শীতের কাপড় জড়িয়ে কর্মজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে বের হয়েছেন। কেউ সবজিখেতে কাজ করছেন, কেউ তা ভ্যানে করে বাজারে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার কেউ কৃষিজমিতে হালচাষ করে নানা শাকসবজির বীজ বপন করছেন। সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পূর্ব আকাশে সূর্য উঁকি দিতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ঝলমলে রোদের দেখা মেলে। তবে উত্তরের ঝিরিঝিরি বাতাস বইতে থাকায় দিনের বেলাও শীত অনুভূত হচ্ছে।
আজ সকাল সোয়া ৮টার দিকে পঞ্চগড় পৌরসভার তুলার ডাঙ্গা এলাকায় বাজারে বিক্রির জন্য খেত থেকে ফুলকপি সংগ্রহ করছিলেন কৃষক শামিরুল ইসলাম (৩৬)। তিনি বলেন, ‘সকালে খেতে গিয়ে কপি কাটতে আসলে কুয়াশায় কিছুই দেখা যায় না। এই বছরের মধ্যে আজ সবচেয়ে বেশি ঠান্ডা। ঠান্ডায় হাত-পাও কাঁপছে।’
পাশের জমিতে গরুর হাল দিয়ে চাষ করছিলেন ফয়জুল ইসলাম (৫৮) নামের এক কৃষক। তিনি বলেন, ‘এত ঠান্ডা বাতাস যে মনে হচ্ছে, পায়ের তলা কাঁপছে। মাটিও ঠান্ডা হয়ে গেছে।’
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্র নাথ রায় মুঠোফোনে, আজ সকালে তেঁতুলিয়ায় চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই এলাকায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে গেছে এবং কুয়াশা কেটে গিয়ে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহ থাকলেও দিনের বেলায় ঝলমলে রোদ থাকায় জনজীবনে কিছুটা স্বস্তি থাকবে।
চুয়াডাঙ্গায় মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় আজ মৌসুমের প্রথম মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। মেঘমুক্ত আকাশ এবং উত্তরের হিমশীতল বাতাসের কারণে হাড়কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাটকালুগঞ্জে অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ৯টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ৮৮ শতাংশ। এর আগে ৪ থেকে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করেছিল।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান জানান, আজ জেলায় শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। গত শীত মৌসুমে ১২ জানুয়ারি জেলায় প্রথম শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গিয়েছিল এবং ওই দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই মাসের ২৩ জানুয়ারি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার হাজরাহাটি গ্রামের বাসিন্দা রিকশাচালক হাফিজুর রহমান বলেন, ‘এবারের শীত বেশিই লাগছে। তাই বেশি সময় গাড়ি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। প্যাসেঞ্জারও খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। সারা বছর এই শীতকালই সবচেয়ে কষ্টকর।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, চুয়াডাঙ্গার শীতার্ত মানুষের জন্য গতকাল ১০ হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে এবং আজ সেগুলো বিতরণ করা হবে।