সোমবার

৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
spot_img

গাছের মধ্যে পেরেক মেরে বিভিন্ন বিজ্ঞাপন

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা

কুড়িগ্রাম শহরসহ বিভিন্ন সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাছের মধ্যে পেরেক মেরে বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের পোষ্টার, ফেস্টুনে ভরে গেছে। পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয় তা দিয়ে পানি ও তার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করে। এতে গাছে দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। যার কারণে অনেক গাছ মারাও যাচ্ছে। দেখার কেউ নেই। মানুষের বন্ধু গাছের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়েই চলছে। গাছগুলি যেন নীরবে কাঁদছে। কিন্তু কে শুনবে গাছের এ নীরব বোবা কান্না? এভাবে আস্তে স্বরে কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের কলেজ পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী। কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে বিভিন্ন সড়কগুলোতে গাছের মধ্যে লাগানো বিজ্ঞাপন বোর্ডে সয়লাব। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিংবা সড়কে লাগানো ছোট বড় গাছের গায়ে লোহার পেরেক দিয়ে আটকানো হয়েছে অসংখ্য সাইন বোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড। বিভিন্ন গাছে ঝুলছে ব্যবসায়িক, চিকিৎসক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রচার-প্রচারণার অসংখ্য ছোট-বড় সাইন বোর্ড, ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার ও বিজ্ঞাপন। যার অধিকাংশ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি কোচিং সেন্টারগুলোর বিজ্ঞাপন। এসব ব্যানার, ফেস্টুন, বিজ্ঞাপন ঝোলানো হয়েছে পেরেক ঠুকে। এক একটি গাছ যেন এক একটি বিজ্ঞাপন বোর্ড। কোন নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই যে যেখানে পারছে পেরেক ঠুকে গাছকে বিজ্ঞাপনের জন্য ব্যবহার করছে। এতে বর্ষা মৌসুমে ছোট-বড় দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হয় পথচারী ও যানবাহন গুলোকে। সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে, রাজারহাট উপজেলার নাজিমখা সড়কে রাজারহাট পাইলট, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং সরকারি মীর ইসমাইল হোসেন ডিগ্রি কলেজে রাস্তার দু’ধারে ছোট-বড় এবং মোটা-চিকন বিভিন্ন মূল্যবান গাছে শত-শত পোস্টার, ফেস্টুন এবং রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ভরে গেছে।

একই অবস্থা চিলমারী উপজেলা পরিষদ কার্যালয় চত্বরে প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে ফেস্টুনে নেতাদের নাম আর ছবিতে ঢেকে গেছে। নাগেশ্বরী উপজেলা পরিষদ চত্বরে নারিকেল গাছসহ বিভিন্ন গাছে ফেস্টুন পেরেক দিয়ে লাগানো হয়েছে এসব ব্যানার।

রাজারহাট কলেজের ছাত্র দেবাশীষ বর্মন বলেন, নাজিমখা সড়কে প্রায় এক কিলোমিটার জুড়ে আনুমানিক পাঁচশতাধিকেরও বেশি গাছে পেরেক দিয়ে পোষ্টার, ফেস্টুন লাগানো। এতে গাছগুলো মরে যাচ্ছে, অনেক গাছের তো পুরো অংশটাই বিজ্ঞাপনে ঢাকা। নাগেশ্বরী উপজেলার বাসিন্দা জহিরুল হক বলেন, পুরো উপজেলার বিভিন্ন অফিস এবং গাছে শুধু নেতাদের ছবি দিয়ে পোষ্টারে সাটানো। এতে করে সরকারি অফিসের সৌন্দর্যটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন চিকিৎসকদের নামের বাহারে সাজানো বিজ্ঞাপন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মীর্জা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, পেরেক লাগানোর কারণে গাছের গায়ে যে ছিদ্র হয়। তা দিয়ে পানি ও তার সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া ও অণুজীব প্রবেশ করে। এতে গাছে দ্রুত পচন ধরে। ফলে তার খাদ্য ও পানি শোষণ প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। এতে করে গাছটি মারাও যেতে পারে। তাই কোনো গাছে পেরেক ঠোকা মানে ওই গাছের চরম ক্ষতি করা। গাছের প্রতি এই নিষ্ঠুর আচরণ দেশের বন আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ। কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কার্যকরি পদক্ষেপ নেবার দাবি জানান তিনি।

জেলা প্রশাসনের সূত্রমতে জানা যায়, মাসিক সম্বন্বয় মিটিং এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক যারা বা যে প্রতিষ্ঠানগুলো অবৈভাবে গাছে পোস্টার, ফেস্টুন ইত্যাদি লাগায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময় নোটিশ দিয়ে এগুলো দ্রুত অপসারণে কার্যকরি পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে বলে জানা যায়।

spot_img

এ বিভাগের আরও সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

spot_img