সোমবার

৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
spot_img

‘চন্দ্রাভিযান ও নারীমুক্তি’

শুভ চন্দ্র শীল

নারীমুক্তি অর্থ শুধু ঘর থেকে বের হওয়া নয় বরং নারীর সামগ্রিক মুক্তি। এক সময় নারীকে মনে করা হতো ঘরবন্দি কোনো এক নিরীহ প্রাণী, ঘর সামলানোই যাদের একমাত্র কাজ। কথাও প্রচলিত ছিলো সংসার সুখের হয় রমনীর গুণে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজের এসব স্লোগান প্রয়োগ করে চেপে রাখা হতো নারীর সফলতাকে, নারী জাগরণকে।

সম্প্রতি ভারত সফলভাবে চন্দ্রাভিযান সম্পন্ন করেছে। তাদের এই সাফল্যে বাংলাদেশও খুশি। সাফল্যের নেপথ্যে ছিলেন ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার (ইসরো) একদল উদ্যোমী বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী। আর তাদের মধ্যে ৫৪ জনই ছিলেন নারী। সব বাধা পেরিয়ে তারাও আপন যোগ্যতাবলে সফল হতে পারেনÑ এটিই যেন বুঝিয়ে দিলেন ইসরোর নারীরা। ভারতের চন্দ্রাভিযান মিশনে এই ৫৪ জন নারী বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা সহযোগী পরিচালক, উপ-প্রকল্প পরিচালক এবং বিভিন্ন সিস্টেমের প্রকল্প ব্যবস্থাপকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইসরোর এক কর্মকর্তা। চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের মাটিতে অবতরণের পরই আনন্দ-উল্লাসে ফেটে পড়েন ইসরোর নারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের সেই আনন্দ উল্লাসের ছবি ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে। তাদের এই কাজে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অনেকে। হাতে চুড়ি কপালে সিদুর শরীরে শাড়ি সাদামাটা পোশাকে সকল তুচ্ছতাকে বলি দিয়ে বিজয় দেখিয়ে দিয়েছেন তারা। এটা শুধু বিজ্ঞানের বিজয় না এটা নারীদের বিজয়, এটা নারীমুক্তির নবতর অধ্যায়। তাদের এই সাহস অনুপ্রেরণা যোগাবে অন্যদেরও।

চাঁদে অবতরণকারী সর্বপ্রথম এবং সর্বকনিষ্ঠ নারী হচ্ছেন সোভিয়েত ইউনিয়নের মহাকাশচারী ও তৎকালীন কমিউনিস্ট নেত্রী ভালেন্তিনা ভ্লাদিমিরোভনা তেরেশকোভা। তার জন্ম ৬ই মার্চ ১৯৩৭-এ। রাশিয়ান প্রকৌশলী, সংসদ সদস্য ও প্রাক্তন মহাকাশচারী তিনি। ১৯৬৩ সালে ১৬ই জুন একক মহাকাশ-যাত্রায় ভোস্টক ৬ মহাকাশযানে আরোহণ করে পৃথিবীকে প্রায় ৪৮ বার প্রদক্ষিণ করেন এবং প্রায় তিন দিন মহাকাশে সময় অতিবাহিত করেছিলেন তিনি। তেরেশকোভার প্রবল ইচ্ছাশক্তি মুক্তি ঘটিয়েছিল নারী জাগরণের।
বিশে^র সাথে তাল মিলিয়ে ভারতের নারীরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়েছে। ধর্মের যাতাকল থেকে বেড়িয়ে এসেছে বহুদিন আগেই। ভারত যখন চন্দ্রবিজয় করছে তখন বাংলাদেশে একটা পক্ষ ধর্মের অজুহাতে নারীদের আটকে রাখছে। বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে আমাদের নারীরা আজও অনেক পিছিয়ে। যখন, এতসব বাধা পেরিয়ে নারীরা বের হয়ে আসছে, খেলাধুলায় এগিয়ে যাচ্ছে তখন দেশের একটা সাম্প্রদায়িক অংশ তাদের নিরুৎসাহিত করছে। নারী জাগরণ ঘটাতে সরকারিভাবে নেই কোনো বিশেষ প্রণোদনা কিংবা বিশেষ উদ্যোগ। রাশিয়া, চীন, আমেরিকার সাথে তাল মিলিয়ে ভারত এগিয়েছে অনেক দূর। ভারতের নারীরা জানান দিয়েছে বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে তাদের সফলতা।

আমাদের উপমহাদেশে নারী জাগরণের অগ্রজ প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বেগম রোকেয়া, ইলা মিত্র, সুফিয়া কামালসহ আরোও অনেকে। নারীমুক্তির দাবিতে তারা লড়াই করেছেন। প্রচলিত সমাজব্যবস্থা ভেঙ্গে সাম্যের সমাজ গড়ার সংগ্রামে প্রাণ দিয়েছেন অনেকে। সাম্প্রদায়িক শক্তি এখনো তৎপর, তারা চায় নারী ঘরবন্দি থাকুক, পরিবারের সদস্যদের দেখভাল করুক, চার দেয়ালের মধ্যে আটকে থাকুক তার জীবন।

অথচ দেশের নারীরা আজ ছুটছে, রেলগাড়ি থেকে বিমান, কোম্পানী থেকে প্রতিষ্ঠান সবকিছুতে নারী সংখ্যা খুব বেশি না হলেও কর্মক্ষেত্রে নারীরাই এগিয়ে। রাজনীতিতেও বেড়েছে নারীদের অংশগ্রহণ। শিক্ষায় জ্ঞানে নারীরা আজ মাথা উঁচু করে বাঁচছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে নারী তার আপন শক্তির বলে এগিয়ে যাচ্ছে।

লেখক পরিচিতি: সংবাদিক ও লেখক।

spot_img

এ বিভাগের আরও সংবাদ

spot_img

সর্বশেষ সংবাদ

spot_img