দেশ জাগরণ ডেস্ক
চট্টগ্রাম অঞ্চলে প্রতি বস্তা চালের দাম ১৫ দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, বাজার তদারকি, সরকারি শুল্কছাড়, টাস্কফোর্স গঠন, আমদানির অনুমোদন দিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
আমনের ভরা মৌসুমেও চট্টগ্রামে চালের দাম বাড়ায় শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের সংসার চালানো কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এতকিছুর পরও বাজারে দাম কমানোর প্রভাব কেন পড়ছে না তা খতিয়ে দেখতেও আহ্বান জানান ভোক্তারা।
যদিও বাজার সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মিল মালিকদের কারসাজিতে বাড়ছে চালের দাম। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দফা বেড়ে বর্তমানে ৩ হাজার টাকার প্রতি বস্তা মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৩০০ টাকা। উপজেলাগুলোতে খুচরা পর্যায় দাম আরও বেশি।
উত্তরাঞ্চলের মিল মালিকরা ঘটে যাওয়া বন্যা, চাষাবাদ কম, পরিবহণ সংকট, সরবরাহ সংকট, ধানের দাম বৃদ্ধি ও মজুত কমে যাওয়া অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ খুচরা ও পাইকারী ব্যবসায়ীদের।
সিন্ডিকেট কারসাজি করে প্রতি বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে চালের বাজার অস্থির করে তোলেন মিল মালিকরা। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। মূলত প্রশাসনের নজরদারির অভাবকে পুঁজি করে ধান-চালের দাম ওঠানামা করান এসব অসাধু ব্যবসায়ী। অন্যদিকে নগরীর চাক্তাইর মিল মালিকরা বলছেন, গত দুই মাসে মনপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত। যার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে।
চালের আমদানি শুল্ক ১৫ শতাংশের পাশাপাশি রেগুলেটরি শুল্ক ৫ শতাংশ নির্ধারিত ছিল। গত ১ নভেম্বর সরকারি আদেশে এই শুল্ক প্রত্যাহর করা হয়। শুধু ২শতাংশ অগ্রিম আয়কর রাখা হয়।
এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরের খোলাবাজারে (ওএমএস) এবং ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) ডিলারদের মাধ্যমে নিম্ন আয়ের মানুষদের কম দামে চাল বিক্রি করছে। এরপরও চালের বাজার স্থিতিশীল থাকছে না। বেশিরভাগ মিলার চাল মজুত করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
একইভাবে জি-টু-জি’র আওতায় বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা হলেও বাজারে চালের দামে প্রভাব পড়ছে না। চট্টগ্রামে বড় কোনো চাল কল নেই, যা আছে তার বেশির ভাগই ছোট। এসব কল চাল মজুত করে বাজারে প্রভাব ফেলার সক্ষমতা নেই। এখন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বড় করপোরেট হাউজগুলো। তারা চালকল মালিক বা মিলারদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ চাল কিনে নিচ্ছে। এরপর তাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডে মোড়ক দিয়ে বাজারজাত করছে। পাশাপাশি এসব চাল বাজারে অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে। একটি করপোরেট হাউজ একশটি বা তারও বেশি কলের সব চাল একসঙ্গে কিনে নিচ্ছে। দেশের চার-পাঁচটি করপোরেট হাউজ এভাবে সিংহভাগ কল থেকে চাল কিনে নেওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়ছেন বিপাকে। করপোরেট হাউজগুলোর সঙ্গে টিকতে পারছেন না তারা। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে করপোরেট হাউজগুলো। তারা চালের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। ফলে বাড়ছে চালের দাম। আবার অনেকে চাল আমদানির অনুমতি নিয়ে চাল আমদানি করছেন না। ফলে সরবরাহ কিছুটা কম। এভাবেই গড়ে উঠছে সিন্ডিকেট!